গরমে কি কি খাবারগুলো খাওয়া উচিত

গরমে কি কি খাবারগুলো খাওয়া উচিত



গরমকালে একজন স্বাভাবিক পূর্ণ বয়স্ক মানুষকে কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানীয় পানের প্রয়োজন। যার মধ্যে বেশির ভাগই থাকবে নিরাপদ পানি। তারপর শরবত (চিনি বা গুড় ও লেবুর তৈরি,  বা বেলের শরবত) ইসবগুল, ফলের রস, জুস, লাচ্ছি , হালকা গরম চা বা কফি, কোমল পানীয়, ডাবের পানি এবং ক্ষেত্রবিশেষে খাবার স্যালাইন। ডাবের পানির মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট। এটি শরীরকে আর্দ্র রাখতে কাজ করে। তাই গরমে শরীরকে আর্দ্র রাখতে প্রতিদিন এটি খেতে পারেন।  খুব গরমে এক গ্লাস লেবুপানি আপনাকে প্রশান্তি দেবে। এটা স্বাস্থ্যকর, পাশাপাশি শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও কাজ করবে।

সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের খাদ্য তালিকায় কিছু খাবার যোগ এবং কিছু বিয়োগ করলেই এই গরমে অবস্থা চরমে ওঠার আগেই থাকতে পারা যাবে অনেক আরামে। লোভনীয় কোল্ড ড্রিংস, আইসক্রিম বাদেই শরীর ঠাণ্ডা রাখে কোন কোন খাবার একটু দেখে নেয়া যাক।

পেঁপে : খুব কম পরিমাণে ক্যালরি থাকায় (৩৯ ক্যালরি / ১০০ গ্রাম) এবং কোন কোলস্টরেল না থাকায় এবং সর্বপরি ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস খনিজ এবং ভিটামিনের সমৃদ্ধ হওয়াতে গরমে পেঁপে খুব উপকরি। আর পেঁপের সবচেয়ে বড় গুন হল কাঁচা পাকা যে কোন অবস্থাতেই খাওয়া যায়।
উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি থাকে (৬১.৮ মিগ্রা বা ১০৩% DRI) যা লেবু বা কমলা থেকে বেশী


করলা : আপনার বাসায় যদি কোন ডায়াবেটিসের রোগী থাকে তাহলে আপনার জন্য করলা বাজার থেকে কেনা ফরজ, যদি না নিজে চাষ করেন। কারণ, ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ও পলিপেপ্টাইড-পি(এক ধরনের উদ্ভিজ ইনসুলিন যা রক্তে চিনির পরিমান কমায়) সমৃদ্ধ
উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক জটিল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করার এক বিশেষ গুন আছে করলা তে। করলা ভাজি করে খেতে বেশী মজা তবে উপকার বেশী ভর্তা বা রস করে খেলে।

শশা : রূপচর্চায় আমরা সবাই জানি শশা কতটা কাজের। তবে শশা ত্বকের উপরে লাগানোর চেয়ে খাওয়া বেশী স্বাস্থ্যকর।

খুবই কম ক্যালরি থাকে(১৫ ক্যালরি / ১০০ গ্রাম)
কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ভাল কাজ করে।
পটাশিয়ামের খুব ভালো উৎস।
ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, বেটা ক্যারটিন সহ নানা উপকারী উপাদানে সমৃদ্ধ।
ওজন কমাতে সাহায্য করে।

শশা সালাদ হিসেবে, জুস করে অথবা তরকারী হিসেবেও খেতে পারেন।

লাউ : গরমে শরীরের ভিতরে যদি এ সি লাগাতে চান তাহলে বেশী করে লাউ খান। লাউ এর চেয়ে শরীর বেশী ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবার খুব একটা নাই। আর আমাদের দেশে এর সহজলভ্যতার কারনে এটি শরীর ঠাণ্ডা রাখা খাবারের তালিকায় প্রথমে। সাধের লাউ শুধু বৈরাগী বানায় না, অনেক রোগের আরোগ্যেরও কারণ।এটি সোডিয়াম ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। পটাসিয়াম শরীরে তরল ধরে রাখতে এবং তরলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
পানির পরিমাণ বেশী থাকায় শরীর ঠাণ্ডা রাখে হজমে সহায়তা করে প্রসাবের জ্বালা-পোড়া কমায়
গ্যস্ট্রিকের আলসারের সমস্য সমাধানে ভাল কাজ করে লাউ পাতার রস জন্ডিসের ভাল ঔষধ ।এটি ওজন কমাতে উপকারী। প্রতিদিন লাউ এর তরকারি বা ভাজি করে খেতে পারেন। প্রাচীন ভারতে ঋষিরা লাউ এর রস ও লবণ মিশিয়ে সরবতের মত পান করতেন। ছোট বাচ্চারা খেতে না চাইলে দুধ দিয়ে সেমাই এর মত দুধ কদু বা দুধ লাউ করে দিতে পারেন।


তরমুজ : তরমুজের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। পুরা তরমুজের সিংহভাগ পানি থাকায় গরমে তৃষ্ণা মেটানোর খুব উপকারী ফল। তবে শরীর অনেকক্ষণ ধরে ঠাণ্ডা রাখতে তরমুজের চেয়ে লাউ বেশী কাজের।

ভিটামিন এ, লাইকোপিন, বেটাক্যারোটিন প্রভৃতি উপকারী উপাদানে সমৃদ্ধ
পটাশিয়াম, সোডিয়াম সহ কার্যকরী খনিজ উপাদান পাওয়া যাবে।
তরমুজ কেটে বা জুস করে বরফকুচি দিয়ে ঠাণ্ডা করে খেতে পারেন।

বেল : গাছে বেল পাকলে কাকের কিছু না হলেও এই গরমে আপনার স্বস্তির কারণ হতে পারে। তাই বেল তলায় বার বার যান আর বেলের শরবত বেশী করে খান।

আনারস : গরমের সময় আমাদের অনেকেরই সর্দিকাশি সহ ভাইরাল জ্বর হয়ে থাকে। শরীর সুস্থ রাখতে গরমে বেশী করে আনারস খেতে পারেন। ভিটামিন সি সহ দেহের জন্য উপকারী অনেক উপাদানই পাবেন আনারসে। আনারসের জুস হতে পারে আপনার প্রতিদিনের খাবারের স্টারটার।

ডাব : সত্যি বলতে বাজারে যত এনার্জি ড্রিংক আছে তাদের সবগুলোর থেকে বেশী উপকারী ডাবের পানি। এটি সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে গরমে পানির তৃষ্ণা মেটানোর উপহার বলা যায়। প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি এবং কিছু ভিটামিন সি থাকে।
ঠাণ্ডা-গরম আমাদের প্রকৃতিরই অংশ। আসুন সবাই মিলে সুস্থ থাকার চেষ্টা করি। ও, ভালো কথা, এখানে যে খাবারগুলোর কথা বলা হলো সবই আমাদের দেশে প্রচুর পাওয়া যায়, তবে, কেনার সময় সাবধান। ফরমালিন ও ক্যামিক্যাল মুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।

গরমে হালকা খাবার খাবেন। গরম ও ঝালযুক্ত খাবার পাকস্থলীর জ্বালাপোড়া বাড়ায়। তাই এ সময়টায় হালকা খাবার খাওয়াই ভালো। এ সময় সবুজ সবজি বেশি খান। এতে রয়েছে আঁশ। এটি শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। গরমকালে পোলাও, বিরিয়ানি খেতে হবে পরিমাণ মতো।  সুস্থ থাকুন।









একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন