তরমুজ বিচির আশ্চর্যগুণ-দানা আর ফেলবেন না!

তরমুজ বিচির আশ্চর্যগুণ-দানা আর ফেলবেন না!



তরমুজের বিচি কখনও খেয়েছেন? নিশ্চয়ই কপাল কুঁচকে বলবেন, দেশে কি খাওয়ার জিনিষের অভাব পড়েছে যে, তরমুজের বিচি গিলতে হবে? নিশ্চয় নয়, কিন্তু, এমন অনেক জিনিস আছে শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী হওয়া সত্ত্বেও আমরা ফেলে দিই শুধুমাত্র নিজেদের অজ্ঞতার কারণে। তরমুজের বিচি তেমনই একটি জিনিস।

আমেরিকার কৃষি দফতর পরামর্শ দিয়ে বলেছে, তরমুজের দানা ফেলবেন না। তরমুজ কাটার সময় দানাগুলো একজায়গায় জড়ো করে, ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে রেখে দিন। দিনে যখন খুশি যেভাবে খুশি স্ন্যাক্স মনে করে খেয়ে ফেলুন। কিন্তু কেন খাবেন? সেই প্রশ্নের উত্তর পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।

প্রোটিন: তরমুজের দানা উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ। একজন ব্যক্তির সারাদিন যে পরিমাণ প্রোটিন প্রয়োজন পড়ে, তার ৬০% আপনি পাবেন এক কাপ (৩০.৬ গ্রাম) তরমুজের দানায়। শরীরের পক্ষে প্রয়োজনীয় নানা ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। তার মধ্যে একটা আর্গিনাইন। যার কাজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ। করোনারি হার্ট ডিজিজের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এটা একটা জরুরি উপাদান। এ ছাড়াও গ্লুটামিক অ্যাসিড, লাইসিন, ট্রিপ্টোফানের মতো প্রোটিন রয়েছে তরমুজের দানায়।

ভিটামিন-বি: বিভিন্ন ভিটামিন বি-ও রয়েছে তরমুজের দানায়। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, খাবারকে এনার্জিতে পরিণত করতে সাহায্য করে ভিটামিন বি। এ ছাড়াও নানাবিধ জৈবিক প্রক্রিয়াতেও ভিটামিন বি-এর একটা গুরুত্ব আছে। নিয়াসিনের মতো জরুরি ভিটামিন বি আপনি পাবেন তরমুজের দানায়। যার কাজ হল স্নায়ুতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রকে রক্ষণাবেক্ষণ করা। এমনকী ত্বক ঠিক রাখতেও নিয়াসিন জরুরি। রয়েছে থিয়ামিন, রাইবোফ্লাবিন, ভিটামিন বি৬-ও।

মিনারেলস: খনিজের মধ্যে আপনি পাবেন ম্যাগনেসিয়াম। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ জানাচ্ছে, ম্যাগনেসিয়াম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়াও কার্বোহাইড্রেটের বিপাকে সাহায্য করে। ফলে, ব্লাডসুগার এড়াতে তরমুজের দানার গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়াও ফসফরাস, আয়রন, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্ক রয়েছে।

ফ্যাট: এককাপ শুকনো তরমুজের দানায় ৫১ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে। এর ১১% হল স্যাচুরেটেড ফ্যাট। বাকিটা পলিস্যাচুরেটেড, মনোস্যাচুরেটেড এবং ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, মনো এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করতে সাহায্য করে। ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে, মাথায় রাখতে হবে, এককাপ তরমুজের শুকনো দানায় রয়েছে ৬০০ ক্যালোরি।


কিছু তথ্য : তরমুজ থেকে সরাসরি না খেয়ে বিচিগুলো শুকিয়ে খোসা ছাড়িয়ে খেলে তা আরও বেশি পুষ্টির যোগান দেয় বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিশেষজ্ঞরা। খোসা ছাড়িয়ে নিলে এর থেকে অনেক ক্ষতিকর জিনিস বের হয়ে যায়, আর প্রোটিনে ভরপুর হয়ে উঠে। এরকম মাত্র ১ আউন্স তরমুজ বীজ প্রায় ১০ গ্রাম প্রোটিনের যোগান দেয়।

তরমুজের ক্ষেত্রে এর বীজের উপরের কালো খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের সাদা অংশ বের করা হয়। এতে বিচিগুলো জীবাণুমুক্ত হয়, পুষ্টিগুণ বাড়ে আর হজমে সহজ হয়। এই বিচিগুলোতে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম আর উপকারী ফ্যাট থাকে যা কোলেস্টেরল কমায় আর হার্টের অসুখ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।

তবে সরাসরিও তরমুজের বিচি খাওয়া যায়। আর সেটা খেতেও অনেকটা তরমুজের মতই। তরমুজের বিচির স্বাদ অনেকটা সূর্যমুখীর বিচির মতই, তবে অনেকটাই কুড়মুড়ে আর পুরু। সালাদের সঙ্গেও খেতে সুস্বাদু তরমুজের বীজ।

মূলত যে কোনো বীজই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কিন্তু তরমুজের বীজ একটু বেশিই উপকারী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন